খিলাফাহ কায়েম করা কি আসলেই কঠিন কোনো কাজ?

সুলতান নবাব আল বাঙালি | 19 Jul 2025, 02:29 PM

খিলাফাহ কায়েম করা কি আসলেই কঠিন কোনো কাজ?

জ্বী কঠিন কাজ! যদি আপনি পুরো পৃথিবীতে খিলাফাহ কায়েম এর স্বপ্ন দেখেন তাহলে অনেক কঠিন কাজ। এর জন্য আপনাকে প্রতিটা রাষ্ট্রের সাথে আলোচনায় বসতে হবে। প্রতিটা রাষ্ট্রের নাগরিকদের সাথে জনসংযোগ বজায় রাখতে হবে। তাদের মাঝে ইসলামী খিলাফাহ এর বিষয়ে জানাতে হবে। আমরা যদি পুরো পৃথিবীতে খিলাফাহ কায়েম এর মতো কঠিন কাজ থেকে আরেকটু সহজে আসতে চাই, তাহলেও সম্ভব। তার জন্য আমাদের নিজেদের দেশকে নজরে আনতে হবে। যদি বলেন নিজের দেশে খিলাফাহ কায়েম করা কি কঠিন কাজ? তাহলেও বলব হ্যাঁ কঠিন কাজ, খানিকটা সহজ হলেও এ কাজে আপনাকে নানা ধরনের বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে। আপনি খিলাফাহ এর জন্য দেশে আন্দোলন করবেন, কিন্তু দেশের স্বৈরাচারী সরকার, মিডিয়া, লেখক আপনার বিরুদ্ধে মাঠে নামবে। আপনাকে তারা নিজ দেশে ও পশ্চিমা দেশের সামনে একজন জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করবে। আপনার বিরুদ্ধে জঙ্গি মামলা করা হবে। তখন হয়তো আমার বলা "খানিকটা সহজ" কথাটা আপনার কাছে মনে হবে অত্যন্ত তেতো কথা। আপনার জীবনকে মনে হবে তেতো বিষাদময় সবচেয়ে কঠিন জীবন। দেশের নাগরিকরা আপনাকে জানবে শান্তি ভঙ্গকারী জঙ্গি। যে কিনা হাত পা কাটার মতো ভয়ানক শাস্তির বিধান প্রতিষ্ঠা করতে চায় এদেশে।
ইসলামী খিলাফাহ আজকাল কিছু কিছু লোকদের মাঝে এমনই ভয় ধরিয়ে দিয়েছে যে, তারা এটাকে কঠিন করে দেখে। তারা দেখে খিলাফাহ কায়েম হলে দেশে হাত পা কাটা হবে, গর্দান কাটা হবে। অথচ তারা এটা দেখে না যে, ইসলামী খিলাফাহ কায়েম হলে দেশের অপরাধ ৯৯% কমে যাবে এই কঠিন শাস্তির ভয়ে। যে চোর, সে যদি চুরি করে তাহলে হাত কাটা যাবে। চুরি না করলে হাত কাটা যাবে না। মোটকথা, অপরাধ করলে অপরাধীকে শাস্তি পেতেই হবে। অপরাধ না করলে শাস্তি হবে না। এতে নিরপরাধ মানুষের ভয়ের কোনো কারণ দেখছি না। ইসলামী খিলাফাহ কায়েম এর কথা শুনলে ভয় পাবে অপরাধীরা।

আপনাদের মনে প্রশ্ন থেকেই যায়, তাহলে এদেশে ইসলামী খিলাফাহ কায়েম করা কি সম্ভব হবে না? হ্যাঁ সম্ভব হবে। আপনি নিজেকে এর জন্য প্রস্তুত রাখুন। আপনাকে সর্বদিক থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আজকাল স্বৈরাচারী হলুদ মিডিয়া মুসলিম আলেমদের জঙ্গি হিসেবে মিডিয়ায় প্রচার করে। ইসলামী খিলাফাহ কায়েম শরীয়াহ্ আইনকে তারা জঙ্গিবাদ হিসেবে প্রচার করে। আমি যখন সালতানাতে বাংলা নামক এই ওয়েবসাইট তৈরি করি, তখন আমার নিয়ত ছিল এসব স্বৈরাচারী মিডিয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে সঠিক কথা মিডিয়ায় প্রচার করা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথায়, কলমে, মিডিয়ার মাধ্যমে রুখে দাঁড়ানো। সেই নিয়ত এবং ইসলামী খিলাফাহ কায়েম এর স্বপ্ন নিয়ে ওয়েবসাইটের নাম দিয়েছি সালতানাতে বাংলা। যে বাংলা সবসময় সত্যের কথা বলে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে।
খিলাফাহ কায়েম যদি সম্ভব করতে চান তাহলে আপনাকে স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে সর্বদিক থেকে প্রতিবাদ করতে হবে। নিজেকে শক্তিশালী রাখতে হবে, মার্শাল আর্ট এর মাধ্যমে নিজেকে আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। কেউ হয়তো বলবেন এসব করে কি আত্মরক্ষা করা যায়? বাতিলদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র আছে। ওসবের বিরুদ্ধে আমাদের এসব আত্মরক্ষা কি কাজে আসবে? জ্বী ভাই, আপনি ঠিক বলেছেন। যদিও আমাদের মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র নেই, কিন্তু আমাদের ঈমানী শক্তি। যে শক্তি বাতিলদের নেই।

আমার কথার মাঝে অনেক প্রশ্ন আপনাদের মনে থাকতে পারে! এজন্য আমি একটি ঘটনা উল্লেখ করতেছি। আপনাদের হযরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাগুত গৌড় গোবিন্দ রাজার কথা মনে আছে? সেকালের তাগুত রাজা এখনকার স্বৈরাচারী তাগুত এমপি মন্ত্রী সরকারদের মতো। তো হযরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি কিভাবে চলতেন? সর্বদা তাঁর ও তাঁর অনুসারী আলেমদের হাতে লাঠি থাকতো। আত্মরক্ষা? শুধু আত্মরক্ষার জন্য নয়, কোনো বাতিল যদি তাঁদের সম্মুখে ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু বলতো বা ইসলামকে অপমান করতো তাহলে তাঁরা বাতিলদের বিরুদ্ধে লড়ে যেতেন। তাঁরা শুধুই আল্লাহকে ভয় করতেন, বাতিলদের চোখ রাঙানি, হুমকি ধমকি তাঁদের কাবু করতে পারতো না। আমার অভ্যাস হলো, আমি কারো চোখ রাঙানি সহ্য করতে পারি না।
যদি কেউ আমাকে থ্রেড দেয়, তাহলে আমি চেষ্টা করি সেখানেই তার প্রতিবাদ করতে। ভাই আমি যদি ভুল কথা বলি তাহলে আমার কথার ভুল ধরিয়ে দিবেন, কথার মাঝে কাউন্টার দিয়ে আমাকে চুপ করিয়ে দিবেন কেন? চুপ না হলে আমাকে বের করে দেবার হুমকি। তর্ক আর আলোচনার ফারাক যে করতে পারে না তার জন্য আমার আফসোস হয়। যাই হোক আমি সেখান থেকে মুক্ত হয়েছি। আমি আর সেখানের কথা আলোচনা করতে চাচ্ছি না। কারণ, তারাও আমার ভাই।

তো হযরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর সাথে থাকা আলেমগণ ছিলেন নির্ভয়। কোনো বাতিলের চোখ রাঙানিকে সহ্য করতে পারতেন না। নির্ভয়ে তার প্রতিবাদ করতেন। আপনাকেও তাঁদের মতো হতে হবে। কোনো বাতিলকে ভয় করা যাবে না। ভয় পেলে সামনে অগ্রসর হওয়া যাবে না, এবং ইসলামী খিলাফাহ কায়েম এর স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। আজকাল বাংলায় আত্মরক্ষামূলক লাঠি বা সেল্ফ ডিফেন্স স্টিক পাওয়া যায়, যা বাংলায় অবৈধ নয়। আপনি তা ব্যবহার করতে পারেন, সর্বদা সাথেও রাখতে পারেন। আমাদের আশেপাশে সকল ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধ্যমতো প্রতিবাদ করতে হবে। ইসলামী কোনো দলের মধ্যে ফারাক সৃষ্টি করবেন না। জামায়াতে ইসলামী দল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম, আমি প্রত্যেককেই পূর্ণ সমর্থন করি। কারণ তাঁদের মিশন হলো এই বাংলায় ইসলামী খিলাফাহ কায়েম করা। আর আমার উদ্দেশ্যও ঠিক তাই। যদিও কিছু দলের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে আমি কিছু লক্ষ্য করেছি।

হযরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি কিভাবে তাগুত রাজা গৌড় গোবিন্দকে ধ্বংস করেছিলেন?

রাজা গৌড় গোবিন্দের ছিল লক্ষ লক্ষ সৈনিক। আর এদিকে হযরত শাহ জালাল রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁরা ছিলেন ৩৬০ জন। সংখ্যার দিক থেকে গৌড় গোবিন্দের বেশি সৈনিক। কিন্তু ঈমানী শক্তি ছিল মুসলিমদের। ঈমানী শক্তির সামনে কোনো শক্তিই টিকে থাকতে পারে না, আর পারবেও না ইনশাআল্লাহ্। ঈমানী শক্তির মনোবলে মুসলিমরা গৌড় গোবিন্দকে হারিয়ে ফেলেন। এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে কতশত আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি হয়েছে। অনেকে হয়তো ২০১৩ সালের ঘটনা টেনে আনবেন। জ্বী ভাই! ২০১৩ সালে তাগুত আওয়ামী লীগের গোলাম জনগণের রক্ষক ভক্ষক হয়ে নিজ দেশের আলেম জনগণের উপর আক্রমণ করে হত্যা করে। সে ঘটনা আমি ভুলিনি, কোনোদিন ভুলবো না। কতশত আলেম সেকালে শাহাদাতবরণ করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা যেনো তাঁদের জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করেন, আমীন।
তবে ২০১৩ সালের ঘটনার ভয়ে তো আমরা বসে থাকতে পারি না। এখন যদি আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকি, তাহলে সৈরাচারীরা ভাববে ২০১৩ সালেই সাহসী মোল্লাদের শেষ করা হয়েছে। এখন আর আমাদের স্বৈরাচার কেউ থামাতে পারবে না। এখনকার যুগে আপনি বিভিন্ন উপায়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারবেন। যেমন আমি লেখার মাধ্যমে, বলার মাধ্যমে করতেছি। যদিও এই প্রতিবাদের ধরন মধ্যম ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। আমি কাউকে দুর্বল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত হতে বলব না।

Khilafah
আমাদের ছোট ছোট ধাপ পেরিয়ে বড় ধাপে এগোতে হবে। ক্লাস 1 থেকে কেউ ক্লাস 10 এ গেলে কিছুই পারবে না। তাই আমাদের এ বিষয়টি মাথায় রেখে সামনে এগোতে হবে। যারা বড় ধাপে পৌঁছেছে, তাঁরা অবশ্যই ছোট ধাপগুলো পেরিয়ে এসেছে। আমাদেরকেও সেই বড় ধাপের আলেমদের অনুসরণ করে সামনে এগোতে হবে। আমাদের আশেপাশে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট অপরাধ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আমরা শক্তিশালী ঈমানের অন্তর্ভুক্ত হয়েই করতে পারবো। কিন্তু বড় বড় পদ পাওয়া লোকদের অন্যায়ের প্রতিবাদ আমরা শুধু মধ্যম ঈমানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে করতে পারবো। হ্যাঁ শক্তিশালী তথা প্রথম ঈমানের অন্তর্ভুক্ত হয়েও প্রতিবাদ করতে পারবো, তবে বড় বড় আলেমদের নেতৃত্বে। কারণ, তাঁদের যে জ্ঞান, যে কৌশল আছে। সে জ্ঞান, সে কৌশল আমাদের নেই। তাই তাঁদের নেতৃত্বে থাকলে একদিন আমরাও তাঁদের মতো হতে পারবো ইনশাআল্লাহ্।

পরিশেষে বলব, আমরা ধাপে ধাপে এগোলে এদেশে অবশ্যই ইসলামী খিলাফাহ কায়েম হবে। অবশ্যই এদেশে কালেমার পতাকা উড়বেই।

لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ مَحَمَّدُ رَّسُوْلُ الله (ﷺ)

📎 সংযুক্তি:
রেটিং: ⭐ 0.0/5

কোনো মন্তব্য নেই।